SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

গল্প : রহস্যময় অংক - সাইফুল মুন্না।

রহস্যময় অংক
সাইফুল মুন্না।
---------------------------*-
আজ স্যারের মেজাজ অত্যন্ত চড়া।
ভয়ে তাকানো যাচ্ছে না মুখের দিকে।
কারণটা অবশ্য জিসানের জানা।স্যারের দুটো টিউশনি চলে গেছে।স্কুলে অভিভাবক সমাবেশে টভলু স্যার (ছাত্রদের প্রদত্ত উপাধী) স্কুলের শিক্ষকদের গৃহশিক্ষক হিসেবে রাখার উপর এক তেজস্বী বক্তব্য প্রদান করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় স্যারের দুটো টিউশনি বাতিল হয়েছে।
আজকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্যার জিসানের সাথে শেয়ার করছেন।যেমন,কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ এবং টিউশনি পাওয়া-যাওয়ার মত মারাত্মক ঘটনাসমূহ। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়,স্যার এখন চড়ের মাত্রা কমিয়ে এনেছেন শূণ্যের কোঠায়।বেশ কিছুদিন আগেও এ ব্যাপারে স্যার “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করতেন।বেশি রাগ হলে দাঁত কড়মড় করে তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। আর তখনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার সাথে শেয়ার করেন।
*** সময় শেষ হওয়ার অনেক আগেই স্যার চলে গেলেন।
জিসান স্কুলের পড়া বের করেছে। আজ সব চাইতে গরম পড়া হচ্ছে গণিতের স্যারের সমান্তর ধারা। স্যার বলেছেন,এক অক্ষর ভুল হলে শরীরে আগুন উঠবে। মারাত্মক পূর্বাভাষ। ক্লাসে অবস্থা হবে আরও ভয়ঙ্কর।
জিসান পড়তে শুরু করল।প্রথমে সূত্র মুখস্ত করছে সে।
সূত্র মুখস্ত করা শেষ করে অঙ্ক শুরু করবে,এর মধ্যে ভুলে গিয়ে আবার সূত্র পড়া শুরু করেছে।সবকিছু উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় মা এলেন পড়ার ঘরে।মাকে দেখে জিসানের মাথাব্যাথা শুরু হচ্ছে।মা মানে মাথাব্যাথা। মাকে দেখলেই তার মাথা জিমজিম করে।
“আজ ১২ টার আগে পড়া থেকে উঠলে ‘গরম পানি' আছে”। চেঙ্গিস খানের মত কণ্ঠ করে বললেন মা।তারপরই পড়ার কক্ষ ত্যাগ করলেন।মা যাবার পর মাথাব্যাথা বন্ধ হলেও পড়ার তাল ঠিক থাকছে না।
জিসান বারবার জপছে, S = a+(n-1)d, ১ম সূত্র।
মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে,  “ s= চেয়ারম্যান + মেম্বার * সেক্রেটারি”।
বেশ কয়েকবার এরকম হওয়ার পর সে পড়া বন্ধ করল।ঘুমে তখন পড়ে যাবার অবস্থা।আবার সে চেষ্টা করল পড়ার।তবে,পূণরায় মেম্বার চেয়ারম্যান বেরোল মুখ দিয়ে।তারপর ঘটল লঙ্কাকাণ্ড।

**** জিসান দেখল তার টেবিলের উপর তিনটি রশি।রশিতে তিনজন মানুষ বাঁধা।পা উপরে মাথা নিচে। ঘর মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে গেল। জিসান ভয়ে কাঁপছে।তার হাত-পা নাড়াতে পারছে না।সারা শরীর অবশ।শুধু চোখ কাজ করছে।
হঠাৎ বেতের বাড়ির শব্দ শুনে পিছনে তাকাল সে।দেখল, লম্বা কালো একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ইয়া লম্বা বেত। লোকটি রশিতে ঝুলানো লোকগুলোকে বারবার পিটাচ্ছে। এবার সে লোকটির মুখে কথা শুনতে পেল।
“৪০+৪০+৪০+......= কত? মি. সেক্রেটারি”।
বলেই লোকটি চল্লিশটি বেত মারল লটকানো প্রথম লোকটাকে। লটকানো লোকটি উত্তর দিচ্ছে,কিন্তু একটিও সঠিক হচ্ছে না।
জিসানের শরীর প্রচণ্ডরকম ঘামছে।সে বসে আছে না শুয়ে আছে বুঝতে পারছে না।
 কালো লোকটি এবার ২য় ঝুলানো লোকের কাছে গিয়ে বলল, “৫০০+৫০০+৫০০+.......=কত? মহামতি চেয়ারম্যান”? 
বলেই বেত দিয়ে পাঁচশটি আঘাত করছে।ঝুলানো লোকটি ভুল উত্তর দিলে আবারো বেতানো শুরু হচ্ছে।
জিসান লোকটিকে ভালোভাবে দেখতে পারছে না।ভয়ের মাত্রা বাড়তে লাগল।জিসানের মনে হচ্ছে, তার চারিদিকে বৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু বৃষ্টির পানি তার মুখ ছাড়া অন্য কোথাও পড়ছে না।
বেতওয়ালা লোকটি তৃতীয় ব্যক্তির কাছে গিয়ে একই কাণ্ড করছে। “২০০+২০০+২০০+.........= কত? মেম্বার সাব”। বলেই বেত শুরু করছে।দুইশটি বেত শেষ হলে আবার দুইশ বার বেত মারছে।
কতসময় বা কতদিন এভাবে চলল জিসান বুঝতে পারছে না।তার কখনও মনে হচ্ছে এক রাত,কখনও এক মাস, কখনও এক বছর।আবার কখনও মনে হচ্ছে, তার জন্মের কয়েকঘণ্টা পর থেকেই এ দৃশ্য দেখছে সে।

কালো লোকটির বেত মারার ভঙ্গি দেখে তার গণিতের স্যার টভলু স্যারের কথা মনে পড়ছে।স্যারের বেত মারার কয়েকটি স্টাইল আছে।“কুবলা স্টাইল” তার মধ্যে অন্যতম।লোকটি কুবলা স্টাইলে বেত মারছে। এস্টাইলটি খুবই জঘণ্য।এ স্টাইল প্রয়োগের সময় স্যার সবাইকে চোখ বন্ধ করার কথা বলতেন।কারণ, এ স্টাইল প্রয়োগের সময় অপরাধীর কোমর থেকে দু ইঞ্চি কাপড় নামিয়ে সেখানে বেত মারা হয়।
***  কালো লোকটি বেত মারার সময় মাঝে মাঝে একটি ছড়া আবৃতি করছে....
                     পাঁচশ আর দুইশ
                      গরিবের অংশ,
                    চল্লিশে আছে ফিস
                     সমান্তরে ডিশমিশ।
জিসান চোখ বন্ধ করে রইল।তার ভয়ের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হলো।এরকম দৃশ্য সে কোনদিন দেখেনি।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে সে কালো লোকটিকে আর দেখতে পেল না।ভয়ের সাথে ভীষণ অবাক হলো সে।বিষয় কিছুই আঁচ করতে পারছে না।ক্লাসে টভলু স্যার তাকে ইন্টেলিজেন্ট বয় বলে ডাকেন।তার ইন্টেলিজেন্সি কোনো কাজে আসছে না।স্যারের উপর রাগ হচ্ছে তার।

সবকিছু যখন উলটপালট তখন ধপাস করে শব্দ হলো।রশিতে ঝুলানো লোকগুলো রশি ছিড়ে মাটিতে পড়ে গেছে।জিসান তাদের তুলতে যাবে এমন সময় তার চোখ কপালে উঠার অবস্থা।
সে নিজেকে আবিষ্কার করল টেবিলের নিচে।দাঁড়িয়ে উঠতেই মা এসে হাজির। অবশ্য এখন এসেছেন না আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছেন তা বুঝা যাচ্ছে না।
টেবিলের দিকে দাঁড়িয়ে আছে সে।বইয়ের পাতা খোলা,খাতার পাতাগুলো কোকড়ানো।টেবিল ক্লথে তার মুখের লালা পড়ে বিশ্রি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মা গর্জন শুরু করলেন, “ কতদিন বলেছি টেবিলে না ঘুমাতে।দেখ,এখন টেবিলের কি অবস্থা।খাতাটা কোকড়িয়ে করেছিস কি? তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে আয়।আমি এখন বসে বসে দেখব কিভাবে টেবিলে ঘুমাস”।
জিসান মুখ ধুতে যাচ্ছে।মা বসে আছেন টেবিলের পাশের চৌকিতে।হাতে লম্বা কঞ্চি।দরজা পর্যন্ত নাগাল পাওয়া যাবে এরকম লম্বা।
মুখ ধোয়ার সময় কপালে সামান্য রক্ত দেখল সে।টেবিল থেকে পড়ে যাওয়ার সময় টেবিলের কোণা লেগেছে।
যাইহোক, এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন থেকে সে মুক্তি পেয়েছে এটা ভেবে ভালো লাগছে।তবে,স্বপ্নের কথা ভুলেও মাকে বলা যাবে না।মায়ের আবার তাবিজের নেশা।স্বপ্নটি শুনলেই চোখ কপালে তুলে পরদিন সকাল ছ’টায় গিয়ে পৌঁছবেন পীরের বাড়ি।"জিসানের টেবিল " পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post