SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

জিসানের টেবিল। সাইফুল মুন্না, saifulmunna

         জিসানের টেবিল
     সাইফুল মুন্না       
-------------------___-------------------
★জিসান বসে আছে টেবিলে।
তার ঠিক বিপরীত পাশে বসে আছেন স্যার।
ডানদিকের চেয়ারে তার ভাই।
ছোট ভাইটি জপছে," জাতীয় ফল কাঁঠাল।"
★ স্যারের চোখগুলো কাঁঠালের বিচির মত।কিছুক্ষণ পরপর তিনি বলছিলেন, " পড়া শেষ?"
জিসানের কাছে মনে হচ্ছে, চারিদিকে বৃষ্টি হচ্ছে। আর হঠাৎ বজ্রপাত হচ্ছে।বজ্রপাতের আওয়াজটা এরকম," ঠাস,পড়া শেষ হয়েছে?"
* সে বিজ্ঞানের প্রশ্ন মুখস্ত করছিল। প্রশ্ন:- মানুষ কিভাবে পরিবেশ দূষণ করে?তার পাঁচটি উদাহরণ দাও।
সে প্রাণপনে জপছিল পাঁচটি লাইন।সেখানে একটি ছিল "যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা"।
কিন্তুু মল কি জিনিস সেটা সে জানে না।এই শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে তার কেমন কেমন লাগে।চাচ্ছিল স্যারকে প্রশ্ন করবে।কিন্তুু সাহস পাচ্ছিল না।কিছুক্ষণ পরপর স্যার আলটিমেটাম দিচ্ছিলেন। অনেক ভেবে সে স্থির করল,প্রশ্নটা করেই ছাড়বে।
হাত-পা টানটান করে সাহসের সাথে বলল,"স্যার, 'মল' মানে কী?"

.........তারপর তার মাথা জিনজিন করতে শুরু করল।
চড়টা বেশিরভাগ মাথায় পড়েছে।কানের কাছে 'বম বম' শব্দ হচ্ছিল।
" একঘন্টা থেকে একটা প্রশ্ন পড়ে। আর জিজ্ঞেস করছে, মল কী।বেটা বেহায়া।আর প্রশ্ন পাও না,ফাইজলামি করো!"....এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললেন স্যার।
জিসানের বুক ধড়ফড় করতে লাগল।অনেক কষ্টে একবার স্যারের দিকে তাকাল।স্যারের মুখটা এখন অদ্ভুত লাগছে।মনে হচ্ছে,চড় মেরে একটু স্বস্তি পেয়েছেন।স্যারকে অনেকটা হনুমানের মত লাগছে।

* তার মাথায় এখন হনুমানের চিন্তা চেপে বসেছে।মুখ দিয়ে বই পড়ছিল আর চিন্তা ছিল জঙ্গলে।টিভিতে সে হনুমান দেখেছে। ডিসকভারিতে হনুমানদের খেলা করার দৃশ্য দেখায়।এদের মুখটা প্রায় মানুষের মতো।স্যার যদি সত্যি হনুমান হতেন তাহলে তিনিও জঙ্গলে থাকতেন।তখন আর তাদের সন্ধ্যার পরে টেবিলে বসে থাকতে হতো না।
★ স্যারের চড় বড় কোনো বিষয় নয়। অ প্রায় প্রতিদিন চড় খায়। স্যার মনে হয় হাতের ব্যায়াম করেন চড় মেরে।স্যারকে কিছু বলা যায় না।তাই, সে মনে মনে অনেক বড় বড় গালি দেয় স্যারকে।মনে মনে গালি দেয়ার মজাই আলাদা।কেউ শুনতে পায় না,অথচ যত ইচ্ছা তত গালি দেয়া যায়।আজ সে বড় একটা গালি দেবে।চোখ ট্যারা করে একবার স্যারের দিকে তাকাল।স্যার মনে হয় গান গাচ্ছেন আর চড় মারার পরিকল্পনা করছেন।সে খুব শক্ত করে মনে মনে বলল,  " শুয়োর"।
*  আবার সে চমকে উঠল।ডান কানে কিছুই শুনছিল না।মাথায় জিম জিম শুরু হলো।ব্যাপারটা সে বুঝতে পারছিল না।সে মনে মনে গালি দিল, স্যার শুনল কিভাবে!!?
বা কানে স্যারের বক্তব্য শুনছিল সে।প্রতিদিন চড় মারার পর একই বক্তব্য দেন স্যার।তার অনেকটা মুখস্ত। " বজ্জাত,কুড়ে, অলস,বেদিশা।তদের মতো ছাত্র জীবনে দেখিনি।পড়া বাদ দিয়ে গরু রাখ।রাখালী কর।"
বক্তব্যের মধ্যে আজ নতুন একটা শব্দ শুনল," হা করে তাকিয়ে থাকো।বই একদিকে আর সাহেবের চোখ এক দিকে।"
এটা শুনার পর সে ব্যাপার পুরোপুরি বুঝতে পারল।মনে মনে যখন গালি দিচ্ছিল, তখন তার চোখ ছিল স্যারের দিকে।স্যার মনে হয় গালির ব্যাপারটা বুঝেছেন!
পাশের টেবিলে জিসানের ভাই বলে উঠল,"স্যার, জাতীয় ফল কাঁঠাল হলে জাতীয় গাছ কী?
স্যার থতমত খেয়ে গেলেন।এটা আবার কী! জাতীয় গাছ আছে নাকি!
 হঠাৎ তার মনে হল ছাত্রের কথা।ছাত্রকে ঠিক করতে হলে দুটো কার্যকরী ঔষধ।  ১।চড়।   ২।কানে ধরে জোরে টান।
 তিনি সজোরে একটা চড় দিলেন গালে।
প্রথম শ্রেণীর ছাত্র হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।কান্নার মাঝে জোরে জোরে দুবার বলল, " কুত্তা"।

স্যার কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। ছাত্র তাকে গালি দিচ্ছে।এখন তার কী করা দরকার! প্রথম ঔষধে ত উল্টো কাজ করল।দ্বিতীয় ঔষধ দিলে যদি দুএকটা লাথি দিয়ে বসে। বাচ্চা মানুষ।লাথির মর্ম বুঝবে না।
কান্না শুনে মা আসলেন রান্নাঘর থেকে। এসেই তার বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরলেন। " বাপ যেরকম, ছেলেরাও ঠিক তাই,শয়তানের দুধভাই। তিনি তার দাদা শশুরের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরাধীকারসূত্রের বৈদ্যুতিক ওয়্যারের বেত নিয়ে আসলেন।স্যারকে পুরো সাহস দিয়ে বললেন, " হাড্ডি আলাদা করেন,কোন বাধা নাই।
স্যার ওয়্যার হাতে নিয়ে ছাত্রের কাছে গেলেন।ছাত্রের মুখটা এখনো হা করা।মাঝে মাঝে দুএকটা খারাপ শব্দ বের হচ্ছে।
স্যার মারের জন্য এগুতেই একটা চিন্তা তার মাথায় আসল।তিনি একটু পিছিয়ে গেলেন।ছেলেরা কাঁদলে সামনে যাকে পায় থু থু দেয়।এই বাদরটা যদি তাকে থু থু দেয়,বিষয়টা কিরকম হবে।
তিনি মাকে ডেকে বললেন, আপনার ছেলে আপনি সামলান,আমি এতে নয়।ছাত্রকে মারলে স্যারের প্রতি ছাত্রের অভক্তি সৃষ্টি হয়।

* জিসানের মা স্যারের কথা শুনে একটু ভাবলেন।স্যার ত ঠিকই বলেছেন।এরকম স্যার আর কয়জন পাওয়া যাবে
তিনি কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন,* স্যারের গত দু মাসের বকেয়া টাকাটা কালকেই পরিশোধ করবেন।

.......... জিসান বসে আছে টেবিলে।
ঠিক তার বিপরীতে স্যার বসে আছেন।এখন আর মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে না।স্যারের মনটা মনে হয় নরম হয়েছে।কারণ, পাশের ঘর থেকে তার ভাইয়ের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল, " ছেড়ে দে,না হয় কামড়ে দেব........স্যার কুত্তা......আ....আ......আ....
★ জিসান ভাবছিল, আবার প্রশ্নটা করবে কিনা।
আস্তে আস্তে বলল,,, "স্যার,  'মল' মানে কী?
স্যার নরম সুরে বললেন, 'সব কিছু জানতে হয় না।সব যে জানে সে ত মানুষ না,ফেরেশতা।'

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post