SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

তালেবানের উৎপত্তি ও পতনের ইতিহাস। Taliban History

তালেবানের উৎপত্তি
তালেবানের ইতিহাস

 তালেবানের উত্থান পতনের ইতিহাস। তালেবান সৃষ্টির ইতিহাস । তালেবান ইতিহাস । Taliban Itihash.


তালেবান সৃষ্টির ইতিহাসঃ তালেবান কারা? 

'তালেবান' শব্দের অর্থ হচ্ছে 'ছাত্র'। এটি একটি পশতু শব্দ। তালেবান বলতে সাধারণত ধর্মীয় স্কুল বা মাদ্রাসার ছাত্রদের বোঝায়। মূলত মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল তালেবান বাহিনী। তালেবানরা দেওবন্দী মতাদর্শের অনুসারী। অনেকে আহলে হাদিস ও বেরেলভী মতবাদ অনুসরণ করে থাকে। তাদের অধিকাংশই সুন্নি ও পশতু। সোভিয়েত বিরোধী অনেক যোদ্ধা ও অন্যান্য সংগঠন থেকে পালানো লোকও তালেবানের সাথে যোগ দেয়।



তালেবান পূর্ব আফগানিস্তানঃ

ব্রিটিশরা এশিয়ার অধিকাংশ দেশ দখল করলেও ২৫০ বৎসর চেষ্টা করেও আফগানিস্তান দখল করতে পারেনি। যারাই আফগানদের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছে, তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। বাদশাহ 'জহির শাহ'কে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আফগানিস্তানে সোভিয়েতপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ( রাশিয়া) সমাজতন্ত্র রক্ষার নামে দেশটি দখল করে নেয়। তখন বিদ্রোহী মুজাহিদিনরা সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে সরকারী বাহিনী ও সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুজাহিদদের ( সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধা) বিরাট পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র)। তারা ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে মিত্র দেশ পাকিস্তানকে। ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করলে মুজাহিদিনরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তবে মুজাহিদিনদের দ্বন্দ্বের সময় ১৯৯৬ সালে তালেবানরা অভিযান চালিয়ে কাবুল দখল করে নেয়।




তালেবানের উৎপত্তিঃ
তালেবানের উৎপত্তিঃ



 তালেবান ইতিহাসঃ তালেবানের উৎপত্তিঃ

কান্দাহারের 'কাশাক নাখুদ' নামক জায়গায় ত্রিশ জনের মত আফগান একত্রিত হয়ে আলোচনা করে কিভাবে দেশকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাত থেকে রক্ষা করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। এজন্য তারা অভিযান শুরু করে। তারা দেশের জনগণকে নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতিশ্রুতি দেয়। তাই তারা ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। একসময় তারা দেশের ক্ষমতা গ্রহন করে। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে 'মোল্লা উমর' তালেবানকে একটি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।



তালেবানের ক্ষমতা গ্রহনঃ

১৯৯৫ সালে তালেবান ১৪ টি প্রদেশ দখল করে নেয়। সেপ্টেম্বরে তারা রাজধানী কাবুল আক্রমণ করে। তালেবানরা নিজেদের পরিচয় দিত এভাবেঃ" আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং শত্রুকে পর্যুদস্ত না করা পর্যন্ত তরঙ্গের পর তরঙ্গ আকারে এগিয়ে যাই।" মুজাহিদিন সরকার তখন কাবুল ছাড়তে বাধ্য হয়। বছরের শেষের দিকে আফগানিস্তানের ৯৫ অংশ এলাকা তালেবানদের অধিকারে চলে যায়। তালেবানরা সরকার গঠন করে কঠোর শরীয়া আইন জারি করে। উল্লেখ্য; মুজাহিদিন সরকারের সময় ১০০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আফগানিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়।


তালেবান শাসনঃ
তালেবান শাসনঃ



Taliban Itihash : তালেবান শাসনঃ

তালেবানরা ক্ষমতায় এসেই কঠোর শাসন শুরু করে। দেশের জনগণকে জোর জবরদস্তি করে শরীয়া আইন মানতে বাধ্য করে। তারা নারী শিক্ষার ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী ছিল না। তারা ফুটবল,ভলিবল,কারাতে,দাবা খেলা নিষিদ্ধ করেছিল।অপরাধ অনুযায়ী তারা হাত পা কেটে ফেলত। তারা ছবি তোলা নিষিদ্ধ করেছিল। তারা মাত্রাতিরিক্ত সংস্কারের চেষ্টা চালায়। 



তালেবান শাসনের ভালো দিকঃ

তালেবান নেতা 'রাহমাতুল্লাহ নাশেমী'র মতে তালেবানের অর্জনসমূহ ছিল-

১. তালেবানরা পাঁচখণ্ডে বিভক্ত আফগানিস্তানকে একত্রিত করে,যা আগে কেউ করে নি।
২. প্রতিটি আফগানের কাছে একটি করে রাইফেল ছিল। এমনকি ফাইটার প্লেন ও হেলিকপ্টার ছিল। তালেবানরা তাদেরকে নিরস্ত্র করার কঠিন কাজটি সমাধা করে।
৩. তারা আফিম চাষের ৭৫ ভাগ কমিয়ে আনে।
৪. তালেবানরা মানুষকে নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেয় এবং দেশব্যাপী বিচার ব্যাবস্থা প্রবর্তন করে।


তালেবান শাসনের ভালো দিকঃ
তালেবানের পতনঃ


তালেবান সৃষ্টির ইতিহাসঃ তালেবানের পতনঃ


তালেবান সরকার দেশকে অনেকটা পাল্টে দিলেও তাদের কঠোর আইন কানুন ও নিয়ন্ত্রণ জনগণকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তাছাড়া, তালেবানের পতনের প্রধান কারণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ' টুইন টাওয়ারে' হামলা। 'আল কায়েদা' গ্রুপকে এ হামলার জন্য সন্দেহ করে যুক্তরাষ্ট্র। আল কায়েদা নেতা 'ওসামা বিন লাদেন'কে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে আশ্রয় দিয়েছিল। লাদেনের বিনিময়ে যুক্তারাষ্ট্র তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তালেবান সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। বুশ সরকার তখন বলে " আমাদের সোনার কার্পেটের প্রস্তাবটি মেনে নাও আর নয়ত বোমার কার্পেটের নিচে তোমাদের কবর রচিত হবে।" 

২০০১ সালের অক্টোবরে আমেরিকা যুক্তারাষ্ট্র আফগানিস্তানে তথাকথিত শান্তি ও গণতন্ত্র রক্ষার নামে " সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ " শুরু করে এবং হামলা চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়। তারা সেখানে 'হামিদ কারজাই' এর নেতৃত্বে একটি অনুগত সরকার গঠন করে। তবে তালেবানদের তারা নিশ্চিহ্ন করতে পারে নি। তালেবানরা তখন থেকে মার্কিন যুক্তারাষ্ট্র ও তাবেদার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। একসময়কার মদদদাতার হাতেই তালেবানের পতন হয়।


তালেবান - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিঃ
তালেবান - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিঃ


তালেবান - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিঃ

২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করে আমেরিকা যুক্তারাষ্ট্র একে " সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ " নাম দেয়। যদিও মার্কিন স্বার্থই এর মূল লক্ষ্য। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে পরবর্তিতে বলি হতে হয় আরব দেশ 'ইরাক'কে। সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে ২০০৩ সালে তারা হামলা চালায়। সাদ্দাম হোসোনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ দিয়ে জাতিসংঘ সনদকে উপেক্ষা করে আমেরিকা যুক্তারাষ্ট্র ইরাকে হামলা করে। যদিও তাদের অভিযোগ ভূয়া প্রমাণিত হয়।
১৯ বছর তালেবানের সাথে যুদ্ধের পর ২০২০ সালে আমেরিকা যুক্তারাষ্ট্র তালেবানের সাথে সন্ধির প্রস্তাব করে। এটি তাদের পরাজয় নির্দেশ করে। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যকার চুক্তি সাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা যুক্তারাষ্ট্র ধাপে ধাপে আফগানিস্তান থেকে তাদের সব সেনা ফিরিয়ে নেবে।  বর্তমানে আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চল তালেবান নিয়ন্ত্রণ করে।


Date: 17-09-2020
------------------

২০ বছরের যুদ্ধ, লাখো প্রাণহানি এবং সর্বশেষ মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দর–কষাকষি শেষে আবারও মসনদে বসে তালেবান। গত ১৫ আগস্ট ২০২১ তারা কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর মধ্যেই আফগানিস্তান ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দেয়।

সংকলন - সাইফুল মুন্না।
     ছাত্র: স্নাতক শেষ বর্ষ।


সহায়ক গ্রন্থ : বিশ্ব রাজনীতির একশ বছর।

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post