SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

চীন ভারত দ্বন্দ্ব ; ইতিহাস,বর্তমান, ফলাফল।

ভারত চীন দ্বন্দ্বের ইতিহাস,বর্তমান,ফলাফল
চীন ভারত দ্বন্দ্ব।


ভারত-চীন দ্বন্দ্বের কারণ,ইতিহাস,ফলাফল।
- তথ্য সংকলনঃ 
- সাইফুল মুন্না।





চীন ও ভারতের ইতিহাসঃ

১৯১২ সালের পূর্বে চীনে রাজতন্ত্র ছিল।  ভারতেও রাজতন্ত্র ছিল ১৭৫৭ সালের পূর্বে। তখন দুটি দেশের মধ্যে পার্থক্য বা সামঞ্জস্য কিছুই ছিল না। ১৯১২ সালে চীনে প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় 'সান ইয়াৎ সেনের' হাত ধরে। আর সে সময় ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্যায় চলছিল ভারতে। তখনও দুটি অঞ্চল সম্পর্ক বা বিবাদ,কোনোটিতে ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তাদের নতুন পথ চলা শুরু হয়। তখন চীনে চলছিল গৃহযুদ্ধ। চিয়াং কাইশেকের গণতন্ত্রপন্থী সৈন্যদের সাথে বিপ্লবী মাও জে দং (মাও সে তুং) এর কমিউনিস্ট সৈন্যদের রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছিল। তখনও ভারত-চীন নামে কোনো ইস্যু গড়ে উঠে নি। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুং পুরো চীন দখল করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা করেন। কাইশেক সরকার ফরমোজায় আশ্রয় নিয়ে তাইওয়ান রাষ্ট্র গঠন করে।


কাশ্মীর নিয়ে চীন ভারত দ্বন্দ্ব।



কাশ্মীর নিয়ে চীন ও ভারতের দ্বন্দ্বঃ

কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে চীন অর্থনৈতিক,সামরিক দিক দিয়ে প্রবল বেগে এগিয়ে যেতে থাকে। তখন ভারতের সাথে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ স্ম্পর্ক ছিল। যদিও "কাশ্মির" ইস্যুতে কিছুটা দ্বন্দ্বের তৈরী হয়েছিল। ( '৪৭ সালে কাশ্মীরের জনগণ পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে হিন্দু রাজা 'হরি সিং' ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তখন ভারত কাশ্মীরের 'জম্মু কাশ্মীর,লাদাখ,সিয়াচেন' দখল করে; পাকিস্তান 'আজাদ কাশ্মীর দখল করে এবং চীন 'আকসাই চীন,ট্রান্স কারাকোরাম' দখল করে নেয়)। চীন- ভারত সীমান্তে যে দুটি সীমানা রয়েছে তার একটি চীন গ্রহন করে নি। 'লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল' মানলেও 'ম্যাকমোহন লাইন' চীন অস্বীকার করে। 


তিব্বত নিয়ে চীন ভারত দ্বন্দ্ব




তিব্বত নিয়ে চীন ও ভারতের দ্বন্দ্বঃ

১৯৫০ সালে চীন,ভারত-চীনের মধ্যবর্তী রাষ্ট্র "তিব্বত" দখল করে নেয়। এসময় তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মগুরু এবং বিপ্লবী নেতা " দালাইলামা " ভারতে আশ্রয় নেয়। দালাইলামাকে নিয়ে চীন-ভারত সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। দালাইলামা ভারতে নির্বাসিত তিব্বত সরকার গঠন করেন ১৯৫৯ সালে এবং ১৯৬৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।






১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধঃ

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের পর ১৯৬২ সালে চীনের সাথে ভারতের কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে চীন ভারত আক্রমণ করে এবং চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। ২০ অক্টোবর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। চীন যুদ্ধে জয়লাভ করে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। এ যুদ্ধের মাধ্যমে চীন ভারত দ্বন্দ্ব প্রবলভাবে দেখা দেয়। চীনের পক্ষে পাকিস্তান অবস্থান নেয় এবং ভারতের পক্ষে আমেরিকা,রাশিয়া ও ব্রিটেন অবস্থান করে।


চীন ভারত দ্বন্দ্ব



পাক ভারত যুদ্ধে চীনের অবস্থানঃ (১৯৪৮,১৯৬৫,১৯৭১,১৯৯৯)


১৯৬৫ এবং ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে চীন পাকিস্তানকে সহায়তা করে।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের আরেকটি যুদ্ধ হয় (৩ ডিসেম্বর-১৬ ডিসেম্বর) যেখানে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে।




ভূটান নিয়ে ভারত চীন দ্বন্দ্বঃ

চীন-ভারতের মধ্যবর্তী রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভূটান পরোক্ষভাবে ভারত নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়টি চীন মোটেই ভালোভাবে নেয় নি। সম্প্রতি ভূটান-তিব্বত মধ্যকার একটি বিস্তীর্ণ এলাকা চীন নিজেদের বলে দাবী করেছে।



চীন ভারত সংঘাত



২০২০ সালের সংঘাতঃ

১৯৬২ এর পর করোনাকালীন সময়ে ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তবর্তী সিকিমে চীনের রাস্তা তৈরীকে কেন্দ্র করে দু দেশের সৈন্যরা রক্তাক্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যেখানে অনেকে সেনা প্রাণ হারান। সীমান্ত এলাকায় যদিও প্রায়ই হাতাহাতি হয়, তবে এরকম রক্তাক্ত দাঙ্গা আগে কখনও হয় নি। এ দাঙ্গা নিয়ে দু দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করে। চীন আগে থেকেই ম্যাকমোহন লাইন অস্বীকার করে এবং ভারতের ' অরুণাচল' প্রদেশ নিজের বলে দাবি করে। এ মতবিরোধ ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাত তৈরী করবে না বললে ভুল হবে।



চিন ভারত বলয়



চীন ভারত বলয়ঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পৃথিবী আমেরিকা-রাশিয়া দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, ওয়ারশ জোট বিলুপ্ত এবং ন্যাম আন্দোলনের মাধ্যমে এ বলয় ধ্বংস হয়। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন,চীনের প্রবল অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া এবং সামরিক দিক থেকে প্রভূত শক্তি অর্জনের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে চীন পৃথিবীর পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। এদিকে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষেত্রে উন্নতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারত চাইবে দক্ষিণ এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে। দুটি দেশের মধ্যে এশিয়াতে ক্ষমতা বৃদ্ধির লড়াই ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।




দক্ষিণ এশিয়ায় চীন ও ভারতের ক্ষমতাঃ

ইতোমধ্যে বন্ধুরাষ্ট্র নেপালের সাথে ভারতের বড় ধরণের বৈপরীত্য দেখা দিয়েছে। 'কালাপানি' সীমান্তে ভারতের রাস্তা উদ্বোধন নিয়ে দু দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক বিতণ্ডা হয়। চীন-ভারত প্রশ্নে নেপাল এখন চীনকে সমর্থন করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান সর্বাবস্থায় চীনকে সমর্থন দিবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশ 'শ্রীলংকা' চীনের সাথে আগে থেকেই একতাবদ্ধ। শুধুমাত্র ভূটান ভারতকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিবে এটা নিশ্চিত। 'বাংলাদেশের' ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যাবে,বাংলাদেশ জন্মসূত্রে ভারতের সাথে সংযুক্ত কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেকটা চীনের প্রতি ঝুঁকে আছে। এদিক থেকে বাংলাদেশ কোনো পক্ষকে নিরঙ্কুশ সমর্থন না করে মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


তথ্যসহায়তায়,

বিবিসি,উইকিপিডিয়া,প্রথম আলো,ওরাকল আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী,বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর।


    - লিখকঃ সাইফুল মুন্না, শিক্ষার্থী,সম্মান চতুর্থ বর্ষ।

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post